আল কুরআনে মহাজাগতিক সকল বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে

Daily Inqilab আদিয়াত উল্লাহ

০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২৬ এএম | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২৬ এএম

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের এই সৃষ্টিজগতের প্রতিটি সৃষ্টির একমাত্র স্রষ্টা এবং একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের অধিকারী মালিক। সৃষ্টির প্রতিটি স্তরে তিনি জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্য রেখেছেন অধিক গবেষণা, জ্ঞানার্জন, আবিষ্কার, গভীরভাবে চিন্তা ও ইবাদতের বহু উপকরণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আকাশ ও ভূপৃষ্ঠের সৃষ্টিতে এবং দিন ও রাতের পরিবর্তনের মধ্যে জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৯০)।

আকাশে রাতের অন্ধকারে লক্ষ লক্ষ তারা কর্তৃক স্নিগ্ধ আলো প্রদান, দিন ও রাতের আবর্তন এবং চাঁদ ও সূর্যকে কেন্দ্র করে দিন – তারিখ – মাস – বছরের গণনা, রাতের আঁধারে পূর্ণিমার চাঁদের দেখা পাওয়া, চান্দ্রমাস শেষে অমাবস্যার রাতে চাঁদকে খেজুর গাছের পুরনো ও বাঁকানো শাখার মতো দেখতে পাওয়া, মহাকাশে ধূমকেতুর অবিরাম ছুটে চলা, পৃথিবীতে উল্কাপি-ের পতন, নক্ষত্ররাজিকে কেন্দ্র করে গ্রহ-উপগ্রহর নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন ও নিজ অক্ষের উপর আবর্তনের ঘটনাবলি কুরআনের অসংখ্য আয়াতে বিদ্যমান। আধুনিক বিজ্ঞান এ সকল বিষয় প্রমাণের বহু আগেই কুরআন এসকল বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক ঘটনাবলির উল্লেখ করেছে। যা কুরআনের অলৌকিকত্ব এবং আল্লাহর একত্ববাদ ও সৃষ্টিজগতের উপর তাঁর একক ও একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের বিষয়ের প্রমাণ।

আল কুরআনের বর্ণনায় মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব ও আধুনিক বিজ্ঞানের স্বীকৃতি প্রদান: আল কুরআনের সুরা আম্বিয়ায় মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত, সত্য ও প্রামাণ্য বর্ণনা রয়েছে, যাকে পরবর্তীতে আধুনিক বিজ্ঞান সত্য বলে স্বীকার করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তারা কি দেখে না যে, আসমান ও জমিন বন্ধ অবস্থায় ছিল, অতঃপর আমি তা উন্মুক্ত করেছি!।’ (সুরা আম্বিয়া : ৩০)। পরবর্তীতে বহু গবেষণার পর ১৯৬০ সালে কুরআনে বর্ণিত এ মহাজাগতিক ঘটনাটি আবিষ্কৃত হয়।

আল কুরআনের বর্ণনায় পৃথিবীর সংকোচন তত্ত্ব ও আধুনিক বিজ্ঞানের স্বীকৃতি প্রদান : বিশ্বজগৎ সংকুচিত হওয়ার বিষয়টি আধুনিককালে আবিষ্কৃত হলেও আল কুরআনে এর বর্ণনা প্রায় সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগেই এসেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা কি দেখে না যে, আমি ভূপৃষ্ঠকে সংকুচিত করে আনছি, এরপরও কি তারাই বিজয়ী!।’ (সুরা আম্বিয়া : ৪৪)। আধুনিক বিজ্ঞানও একে স্বীকৃতি প্রদান করেছে এবং প্রমাণ করেছে যে, মহাশূন্যের আয়তন ক্রমেই কমে আসছে এবং সময়ের সাথে সাথে এ সংকোচনের গতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আল কুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাতের আবর্তন এবং বিজ্ঞান কর্তৃক এর স্বীকৃতি প্রদান : আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের বর্ণনায় চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ ও নক্ষত্রের গতিপথ, দিন ও রাতের আবর্তন এবং এর বৈজ্ঞানিক কারণ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। এর প্রতিটি বর্ণনাই গবেষণার দাবিদার। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সূর্য তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে চলে, এটা মহাপ্রতাপশালী সর্বজ্ঞানী আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আর চাঁদকে আমি কয়েকটি মঞ্জিল নির্দিষ্ট করে দিয়েছি, যা অতিক্রম করে সে পুরনো খেজুরের কাঁদির শুকনো দ-ের মত অবস্থায় ফিরে আসে।’ (সুরা ইয়াসিন : ৩৭-৩৮)।

দিন ও রাতের পর্যায়ক্রমিক আবর্তন এবং চন্দ্র ও সূর্যকে কেন্দ্র করে সঠিক তারিখ নির্ণয়ের বিষয়টিও আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সূর্যের জন্য এটা সম্ভব নয় যে সে চাঁদের নাগাল পাবে আর রাতের পক্ষে দিনের অগ্রবর্তী হওয়াও সম্ভব নয়।’ (সুরা ইয়াসিন : ৩৯)। আর এ দিন ও রাতের আবর্তনের সাপেক্ষে বিশ্বব্যাপী সময়ের হিসেব করা হয়। মহাশূন্যে ভাসমান ও গতিশীল সকল বস্তুর ব্যাপারে আল কুরআনের বর্ণনা : মহাশূন্যে প্রত্যেক নক্ষত্র, গ্রহ ও উপগ্রহ এবং অন্যান্য সকল বস্তুই ভেসে থাকে এবং ভেসে ভেসে নির্দিষ্ট গতিপথে চলে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর প্রত্যেক বস্তুই মহাশূন্যে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে।’ (সুরা ইয়াসিন : ৩৯)।

রাতের আকাশে নক্ষত্রের আবির্ভাব ও ভূপৃষ্ঠে উল্কাপাতের ব্যাপারে কুরআনের বর্ণনা: রাতের আকাশে শত সহস্র নক্ষত্র আলো প্রদানের মাধ্যমে পৃথিবীর পরিবেশকে স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত করে। এগুলোর অধিকাংশই সূর্যের তুলনায় আয়তনে বড়। এদের অবস্থানও লক্ষ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে। এছাড়াও দিনে ও রাতে মাঝেমধ্যেই পৃথিবীর আকাশে উল্কাপাতের দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। মহাজাগতিক এসব ঘটনার বর্ণনা কুরআন অত্যন্ত সংক্ষিপ্তাকারে ও সুন্দরভাবে মানবজাতির নিকট উপস্থাপন করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমি পৃথিবীর আসমানকে সুসজ্জিত করেছি নক্ষত্ররাজির মাধ্যমে এবং তাদেরকে শয়তানসমূহের জন্য নিক্ষিপ্ত উল্কা স্বরুপ বানিয়েছি এবং তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি প্রস্তুত করেছি।’ (সুরা মুলক : ৫)।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা
ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকার বা হক
হিংসা বিদ্বেষের মারাত্মক ক্ষতিকারক দিক
ইসলামের দৃষ্টিতে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার
নারীর সাজসজ্জা
আরও

আরও পড়ুন

রোমাঞ্চকর ড্রয়ে শেষ ইউনাইটেড-লিভারপুল হাইভোল্টেজ লড়াই

রোমাঞ্চকর ড্রয়ে শেষ ইউনাইটেড-লিভারপুল হাইভোল্টেজ লড়াই

মির্জাপুর উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর মৃধার পদ স্থগিত

মির্জাপুর উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর মৃধার পদ স্থগিত

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে বিজিবি হেফাজতে ৩৬ মিয়ানমার নাগরিক

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে বিজিবি হেফাজতে ৩৬ মিয়ানমার নাগরিক

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কর্নেল অলির সাক্ষাৎ

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কর্নেল অলির সাক্ষাৎ

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির মহাসচিব নেওয়াজ

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির মহাসচিব নেওয়াজ

আইনজীবীদের জুরিসপ্রুডেন্সের ওপর বই লেখার আহ্বান প্রধান বিচারপতির

আইনজীবীদের জুরিসপ্রুডেন্সের ওপর বই লেখার আহ্বান প্রধান বিচারপতির

রোমানিয়ায় কূটনীতিক মহসিনকে শাস্তির দাবিতে ৭ দিনের আলটিমেটাম

রোমানিয়ায় কূটনীতিক মহসিনকে শাস্তির দাবিতে ৭ দিনের আলটিমেটাম

লক্ষ্মীপুরে ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান, ৩৯ হাজার টাকা জরিমানা

লক্ষ্মীপুরে ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান, ৩৯ হাজার টাকা জরিমানা

দক্ষিণ এশিয়ান টেনিস বল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ানশীপে রানার্স-আপ সৈয়দপুর দলকে সংবর্ধনা

দক্ষিণ এশিয়ান টেনিস বল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ানশীপে রানার্স-আপ সৈয়দপুর দলকে সংবর্ধনা

সাভার হাইওয়ে থানার ইনচার্জ শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত

সাভার হাইওয়ে থানার ইনচার্জ শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত

ভাড়াটিয়াসহ মালিককে বের করে বসত বাড়ি দখল

ভাড়াটিয়াসহ মালিককে বের করে বসত বাড়ি দখল

যে মামলায় আটক লতিফ বিশ্বাস

যে মামলায় আটক লতিফ বিশ্বাস

নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষকদের প্রস্তুতি নিতে হবে

নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষকদের প্রস্তুতি নিতে হবে

প্রশাসন সংস্কারে কঠোর হতে হবে

প্রশাসন সংস্কারে কঠোর হতে হবে

অসভ্য নগরীতে পরিণত ঢাকা

অসভ্য নগরীতে পরিণত ঢাকা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে চীনের পাল্টা নিষেধাজ্ঞা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে চীনের পাল্টা নিষেধাজ্ঞা

সমুদ্রে ক্ষয়যোগ্য শক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে গাড়িতেও

সমুদ্রে ক্ষয়যোগ্য শক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে গাড়িতেও

উৎসবে আতশবাজি নিষিদ্ধে হাজারও মানুষের আবেদন

উৎসবে আতশবাজি নিষিদ্ধে হাজারও মানুষের আবেদন

বাথরুমের নাম করে গয়না নিয়ে পালালেন কনে

বাথরুমের নাম করে গয়না নিয়ে পালালেন কনে

অর্থ, রসিদ বই নিয়ে পালিয়ে গেল ইসকনের কর্মী

অর্থ, রসিদ বই নিয়ে পালিয়ে গেল ইসকনের কর্মী